প্রকাশিত: ১১/০৩/২০১৮ ৯:৩২ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৫:৩৭ এএম

নিউজ ডেস্ক::
একের পর এক সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টিকারী বক্তব্য দেওয়ার দায়ে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আবারও ধর্মপ্রচারে ফিরেছেন মিয়ানমারের বৌদ্ধ ভিক্ষু অশ্বিন উইরাথিউ। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শনিবার ইয়াঙ্গুনের একটি বৌদ্ধ আশ্রমে বক্তব্য রেখেছেন তিনি। মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম মিজিমা জানিয়েছে, বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মুখপাত্রের পরিচিতি পাওয়া উইরাথিউকে এক সময় ‘বৌদ্ধদের বিন লাদেন’ নামে ডাকা হতো। দেশটির সিনিয়র ভিক্ষুদের একটি কাউন্সিল তার ধর্মপ্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। উইরাথিউ-এর নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার দিনে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন আরেক উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী ভিক্ষু পারমাউক্কা।

গত বছরের আগস্টে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পূর্ব পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার। হত্যা-ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। পালিয়ে আসা শরণার্থীদের দাবি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে রাখাইনের সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাও সহিংসতায় অংশ নিয়েছে। শত শত বছর ধরে সেখানে বসবাস করে আসলেও রাষ্ট্রীয় নীতিতে রোহিঙ্গাদের জাতিগত পরিচয় স্বীকার করে না মিয়ানমার। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগুরু অংশ মুসলিম ধর্মাবলম্বী হওয়ায় রাখাইনের সহিংসতার কারণ হিসেবে সাম্প্রদায়িক বিভেদকেও দায়ী করেন অনেকে। বৌদ্ধ ভিক্ষু অশ্বিন উইরাথিউ ও পারমাউক্কার বিরুদ্ধে ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্য প্রচারের অভিযোগ রয়েছে।

মিজিমার খবরে বলা হয়েছে, এক বছর আগে উইরাথিউ-এর ধর্ম প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় সে দেশের সিনিয়র ভিক্ষুদের নিয়ে গঠিত একটি কমিশন। নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার সময়ে ওই কমিশন জানায়, উইরাথিউ সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি করতে ধর্মের বিরুদ্ধে একের পর এক ঘৃণাসূচক বক্তব্য রেখেছেন। গতকাল শুক্রবার তার নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়। তবে মিজিমা বলছে, নিষেধাজ্ঞা চলার মধ্যেও একাধিকবার তা অমান্য করেছেন তিনি। ফেসবুকের নিজের পেজেও মুসলিম-বিরোধী প্রচারণা চালিয়েছেন উইরাথিউ। এই বছরের জানুয়ারিতে তার পেজ বন্ধ করে দিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, শনিবার ইয়াঙ্গুনে বৌদ্ধ আশ্রমে দেওয়া ভাষণে উইরাথিউ দাবি করেন, তার মুসলিমবিরোধী বক্তব্যের সঙ্গে রাখাইন রাজ্যের সহিংসতার সংশ্লিষ্টতা নেই। রাখাইন ‘বাঙালি সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড’ প্রত্যক্ষ করেছে বলেও দাবি তার। নিজের বিরুদ্ধে সেখানে সহিংসতা সৃষ্টির অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। নিজের শহর মান্দালয়ের শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি হাজির করেন উইরাথিউ।

তিনি বলেন, ‘উইরাথিউ যদি সংঘাত সৃষ্টি করতো তাহলে মান্দালয় ছাই হয়ে যেত। এই সত্য বিশ্ব জানে না।’ ইরাবতী নদীর তীরবর্তী মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয় ২০১৪ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রত্যক্ষ করে। মুসলিমদের বিরুদ্ধে এক বৌদ্ধ নারীকে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ ওঠার পর ওই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

উইরাথিউ এর নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার দিনেই শুক্রবার কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন আরেক উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী ভিক্ষু পারমাউক্কা। ২০১৬ সালের এপ্রিলে ইয়াঙ্গুনের যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের বাইরে রোহিঙ্গা বিরোধী এক বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার অভিযোগে গত বছরের নভেম্বরে আটক হন তিনি। রোহিঙ্গা শব্দ ব্যবহার করায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে সমর্থকদের নিয়ে সেখানে জড়ো হয়েছিলেন তিনি। তিন মাসের কারাদণ্ড ভোগের পর শুক্রবার ইয়াঙ্গুনে নিজের আশ্রমে ফিরে যান তিনি। মিজিমার খবরে বলা হয়েছে, কারাভোগের পরও রোহিঙ্গাবিরোধী মনোভাব ধরে রেখেছেন তিনি। আশ্রমে ফিরে বলেছেন, ‘মিয়ানমারের ১৩৫ টি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর অস্তিত্ব নেই।’

পাঠকের মতামত